Bikers Life

bl 1

Bikers life – বাইকারের জীবন

দোস্ত চাবি’টা একটু দে তো; ছোট্ট একটা কাজ শেষ করে আসি। এই বলে আমার বন্ধু রাকিব আমার বাইকের চাবি নিয়ে গেল প্রায় ৪ ঘন্টা আসেনি!

আমি তুষার (গল্পসূত্রে ছদ্মনাম)। বাইকের প্রতি আসক্তি শৈশব হতে। জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে হলেও বাইকের প্রতি আসক্তিটা কখনো কমাতে পারি নাই। বাইক দেখলেই সেই শৈশব হতেই কেমন জানি একটা অনুভূতি কাজ করে। এমনো হয় যে, হাতের চলমান কাজটাও নিস্তব্ধ হয়ে যেত বাইকের দৃষ্টিগোচরে। একটা সময় পর সেটা যা অভ্যাসে পরিণত। যা আজো অব্দি চলমান।

বাবা ছোট্ট একটা প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত ছিলেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে প্রথম বাড়িতে বাবা মটরসাইকেল কিনে এনেছিলেন। ভীষণ সুন্দর ছিল বাইকটি। সেই থেকে আসক্তি শুরু মূলত। বলতে পারেন বংশগত বাইকার❤️ বাবা’র বাইক চালানো অনেক সুন্দর ছিল। আমি বাবা’র পিছনে বসে বহু ভ্রমণ করেছিলাম। আস্তে আস্তে আমিও বড় হলাম। পড়াশুনাও শেষ করলাম। তারপর পরিবারের হাল ধরলাম। নিজের কষ্টের পরিশ্রমের উপার্জনে বাইক কিনলাম। তারপর হতে নিজের বাইক জীবনের যাত্রা। 

বাইকার এর জীবন তখন অনুভব করলাম একটু ভিন্ন। আর একটা জিনিস উপলব্ধি করলাম। সেটা হলো- বাইকারের বন্ধু বেশি হয়। এখানে চল, চল ঘুরে আসি, চল একটু সামনে, চাবিটা দে টান দিয়ে আসি এসব শব্দ কর্ণদ্বয়ে বারংবার প্রতিধ্বনি হয়। তবে একটা ঘটনা বলি-

প্রতিদিনের মতই অফিস শেষ করে সন্ধ্যার পর বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসলাম। সবাই প্রায় হুটহাট আড্ডায় বসে কাছের সামান্য দূরত্বে যাওয়া হয় তাই প্রায় সকলে বাইক নিয়ে আসে আড্ডায়। আমিও প্রতিদিনের মত বাইক নিয়ে আড্ডায় গেলাম। সবাই আড্ডা দিচ্ছি বহুসময় ধরে। হঠাৎ আমাদের বন্ধু রাকিব আসল আমাদের আড্ডা স্থানে। যদিও সে জানে না আমাদের আড্ডা দিচ্ছি সবাই ব্যাপারটা। তারপর বলে দোস্ত চাবি’টা একটু দে তো; ছোট্ট একটা কাজ শেষ করে আসি। এই বলে আমার বন্ধু রাকিব আমার বাইকের চাবি নিয়ে গেল প্রায় ৪ ঘন্টা আসেনি! এইদিকে রাত ১১ টা পার হয়ে গেল। কাল সকালে চাকরিও আছে। তারপর তাকে ফোন দিলে নাম্বার বন্ধ পাই। পরে সবাই বাসায় চলে যায়। আমিও মনে মনে চিন্তা করছি, বন্ধু’ই তো নিল পরে বাড়িতে দিয়ে যাবে, আর হয়ত মোবাইলে চার্জ নেই তাই বন্ধ এসব ভেবে বাড়ি চলে গেলাম। রাত প্রায় ৩ টার কাছাকাছি আমাদেরই বন্ধু তারেক কল দিয়ে বলে বন্ধু কই তুই তাড়াতাড়ি জেনারেল হাসপাতালে চলে আই। রাকিব গাড়ি এক্সিডেন্ট করছে। ওর অবস্থা ভীষণ খারাপ! আমি ঘুমের চোখে থেকে থমকে গেলাম। মনে হল আকাশটা পুরোটা আমার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ল। তখন মাথায় সত্যি বলতে রাকিবের থেকেও আমার বাইকের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছিল! আমার অনেক কষ্ট আর শখের বাইক। দৌড়ে গেলাম হাসপাতাল। দেখি রাকিব বেড এ শুয়ে আছে আর পায়ে হাতে বেন্ডেজ। স্যালাইনও লাগানো। অনেকসময় পর তারসাথে দেখা করার পারমিশন দিলে ডাক্তার সে বলে- দোস্ত কুকুর বাঁচাতে সিএনজি মারছি🥺 এলাকার একটা গেরেজ এ বাইকটা আছে। সকালে গিয়ে দেখি বাইকের হেডলাইট ভাঙ্গা, সাসপেন্সর এ অনেকগুলে স্কেচ, এন্টিকাটার লাইট একটা আছে আরেকটা নাই! লুকিং গ্লাস বাম পাশের টা পুরো ভাঙ্গা! বাম্পার পুরো ব্যাকা হয়ে গিয়েছে! বুঝলাম অনেক জোরে লাগছে! বিশ্বাস হবে কিনা জানি না, আমি তখন নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম ওইখানে৷ আমার মুখ থেকে একটা শব্দও বের হচ্ছিল না! আমি ঠিকমত দাঁড়াতে ও পারছিনা! এমতবস্থায় আমাকেও ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়েছিল! অনেক গুলো সময় পর আস্তে আস্তে নিজেকে শক্ত করলাম। আর কোথাও গেলে বা কেউ বাইক বা চাবি চাইলে এখন আর দিইনা।

বাবা’র সাথে আমি একসাথে কোথাও গেলে বাবা বাইক চালায়। আমি পিছনে বসে সেই ছোট বেলার মত নিজেকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি। বাবা’র বাইকটি এখনো আছেন। শখের বসে তিনি বিক্রি করেননি এখনো অব্দি। আমারও কেমন জানি মায়া কাজ করে ওই বাইকটার প্রতি যদিও আমি প্রিমিয়াম বাইক ব্যবহার করি বর্তমানে। তবে সবচেয়ে সুন্দর একটা মূহুর্ত ছিল আমার জীবনে যখন আমি আমার বাবাকে নিয়ে নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের ৫টি বিভাগে বাইক নিয়ে বাবাকে পিলিয়ন হিসেবে নিয়ে ভ্রমণ করেছিলাম। এরপর একবার বাবা’কে নিয়ে TT ও সম্পূর্ণ করেছিলাম। আসলে সেটা সম্ভব হল আমার বাবা’র জন্যই। তিনি আমার থেকেও অনেক সাহসী বাইকে আর তার মনোবল ও অনেক শক্তিশালী। তাই এক কথায় বলা যায় প্রতিটি ভ্রমণই সুন্দর ছিল আমাদের।

সকালে অফিসের জন্য বাইক নিয়ে বের হওয়া। বিকেলে বাড়ি ফিরা। পরিবারের কাজে কখনো বাজারে যাওয়া বাইক নিয়ে। আবার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যাওয়া। চা খেতে বেশ অনেক দূরে যাওয়া। প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে বাইক করে কাছে সামান্য দূরত্বে ঘুরতে যাওয়া। বন্ধের দিনে ট্যুরে যাওয়া বাইক নিয়ে প্রায় সব বন্ধু মিলে। এইভাবেই আসলে আমাদের বাইকার’দের জীবন চলে। 

তবে এটা সত্য যে- বাইক প্রতিটি বাইকারের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেটার আঘাত হলে কোন বাইকার’ই নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা। নিজের থেকেও বাইকার তার বাইকের যত্ন নেই বেশি।

গল্পকথক ✍️ ইমন বিশ্বাস 

BDBIKERZ | BD BIKERZ

Comments (1)

  • Shari Beechy
    November 26, 2023

    I am sure this paragraph has touched all the internet viewers, its
    really really good piece of writing on building up new website.

    Reply

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Categories
Become a member

Join Our Family

250+ members and the family keeps growing!

Let’s Ride Together

Our Discount

Partners

BDBIKERZ members will get exclusive discount on our partners shop & enjoy more.

BDBIKERZ members will get exclusive discount on our partners shop & enjoy more.   BDBIKERZ members will get exclusive discount on our partners shop & enjoy more.