Tour of Rosh – BDBIKERZ
রস ট্যুরের ইতিকথা
প্রকৃতিতে লেগেছে শীতের ছোঁয়া। ইট পাথরের নগরীতে বসবাস করায় দিনের বেলায় শীত খুব একটা অনুভব না হলেও সূর্য ডুবতেই আর শেষ রাতে ছড়িয়ে পড়ে শীতল হাওয়া।
পৌষ ও মাঘ এ দুমাস শীতকাল । এই সময়টাতে কুয়াশার নাচন শুরু হয় প্রকৃতিকে নিয়ে । উত্তরের হিমেল হাওয়া বয়, গাছপালা পাতাহীন হয়ে পড়ে। নদ-নদীতে স্রোতের তীব্রতা হ্রাস পায়। শীতের সকালে যখন ঘন কুয়াশায় সবকিছু ঢেকে যায় তখন প্রকৃতিকে অপূর্ব সুন্দর মনে হয়। এ সৌন্দর্য অনেকটা বিমূর্ত। শীতের সকালে প্রকৃতি আশ্চর্য নিস্তব্ধতায় মগ্ন হয়ে পড়ে । শীতের মনোমুগ্ধকর এমন রূপ অনেকের কাছেই প্রিয়, আর প্রিয় খেজুরের রস যা শীতের মধু হিসেবে পরিচিত।
কিন্তু আমরা যারা শহরে বাস করি তাদের শীতের সকালটা একটু ভিন্ন আঙ্গিকেই কাটে। শীতের সকালে শহরবাসীর ঘুম বিভিন্ন পাখির কলরবে না ভাঙলেও, ভাঙে কাকের ডাকে। শীতের সকালটা শহরবাসী ঘুমের মধ্যেই কাটিয়ে দেয়। উঠেই আবার কর্পোরেট জীবন ৯-৫ টা করেই দিন শেষ। তাই শহরের লোকেরা গ্রামের মানুষদের মতো শীতের সকালকে উপভোগ্য করে তুলতে পারে না আর খেজুরের রস খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও হয়ে ওঠে না।
তাই প্রকৃতি প্রেমি আর ভ্রমন পিপাসু মানুষেরা শহরের এই কর্পোরেট কর্ম ব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে ক্ষনিকের জন্য একটু গ্রাম্য হয়ে উঠতে টাটকা রসের স্বাদ পেতে প্রচণ্ড শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোরবেলায় অনেকেই ছুটে যান দূর-দূরান্তে।
আমিও ব্যতিক্রম নই, বেশ কয়েকদিন ধরেই শীতের সকালের কুয়াশায় আবৃত প্রকৃতি উপভোগ করতে আর সাথে ঠান্ডা রসের স্বাদ পেতে মনটা কেমন পলাই পলাই করছিল ।
ঠিক এমনি সময় বন্ধু নাইমুরের ম্যাসেজ পেলাম আমাদের Bd Bikerz এর ফাউন্ডার মেম্বার আদিল ভাই নাকি রস ট্যুরের আয়োজন করেছে। জিজ্ঞেস করলাম, খেজুরের রস কোথায় পাওয়া যাবে? জায়গাটা কোথায়?

সে বলল, গাজিপুরের কালিয়াকৈর তুমি মেসেঞ্জার গ্রুপ দেখো বিস্তারিত দেওয়া আছে, তবে রওনা দিতে হবে শেষ রাতে ভোর হবার আগে পৌছাতে হবে কারন ভোর ছাড়া নাকি রসের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় না। । আমি সাথে সাথে গ্রুপ থেকে প্ল্যানটা জেনে নিলাম।
ভোরে সঠিক সময়ে পৌঁছানোর জন্য পূর্ব নির্ধারিত সময় ও স্থান অনুযায়ী সকাল ৫.০০ টায় আমরা সবাই যার যার বাইক নিয়ে নিকুঞ্জ ফিলিং স্টেশনে মিলিত হই । এবং ঠিক সময়ে বাইক নিয়ে ঢাকা ছেড়ে রওনা দিলাম গাজিপুরের উদ্দেশ্যে।

তখনো রাতের আধার কাটেনি আধার ঠেলে দু-চাকার বাহনে চরে আদিল ভাইয়ের নেত্রিতে সামনে আগাতে থাকলাম । সামনে যত এগুতে থাকলাম দিনের আলোও আমাদের সাথে এগুচ্ছিল গাজিপুরের কালিয়াকৈর পৌঁছানোর পর আধার কেটে একটা সময় দেখা পেলাম আলোর । আমাদের স্বাগত জানাতে Bd Bikerz এর মেম্বার গাজিপুর এর স্থানীয় ভাই রাকিবুল ইসলাম আবির অপেক্ষা করছিলো এবং তিনি আমাদের জন্য সকালের নাস্তা এবং খেজুরের রস ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন।.

রাকিবুল ভাইয়ের সাথে মুল সড়ক থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা রাস্তা ধরে সারি সারি আমাদের বাইকগুলো নিয়ে গ্রামের দিকে ঢুকে পড়ি। গ্রামে সুনসান নীরবতা। কনকনে ঠান্ডা আবহাওয়া। ইটের খোয়া বিশিষ্ট কাঁচা রাস্তা ধরে আমরা পৌঁছলাম এক জায়গায় যেখানে চার পাশটা ছিল অসম্ভব রকম সুন্দর। গাছ গাছালি আর ঘাসের মাঝে শিশিরের বিন্দু বিন্দু কনা এ যেন এক শিতের রাজ্য সাথে খেজুরের গাছ আর গাছি ভাইদের নামানো হাড়ি ভর্তি টাটকা ঠান্ডা রস। শেষরাতের আবছা আলোয় কোমরে দড়ি বেঁধে গাছি ভাইরা কষ্ট করে সংগ্রহ করেছেন এই শিতের মধু খেজুরের রস। টাটকা খেজুরের রস দেখে মন ভরে উঠল। বহুদিন পর খেজুরের রস খেয়ে তৃপ্তি পেলাম। ফিরে গেলাম শৈশবে।

আমার বিশ্বাস, আমার মত এ দেশের গ্রামাঞ্চলে যাদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা তাদের সঙ্গে শীতকালের খেজুর রসের অনেক স্মৃতি আছে, আছে মাঝরাতে গাছে উঠে রস খাওয়ার আনন্দ। শহরের জীবন আমাদের এমন অনেক শৈশবকে বানিয়ে দিয়েছে শুধুই স্মৃতি। তবে সেই স্মৃতি বড়ই মধুময়। খেজুরের রস পান শেষে কনকনে ঠান্ডায় কুয়াশায় আবৃত পরিবেশটাকে উপভোগ করতে হাটাহাটি করা, ছবি তুলা ভিডিও করা সহ গাল গল্পে হাসি আড্ডায় মেতে ছিলাম সবাই । অনেকটা সময় কাটিয়ে গরম গরম ধোয়া ওঠা ভূনা খিচুড়ির সাথে মুরগীর মাংস দিয়ে সকালের নাস্তা শেষ করে আমরা আমাদের ভ্রমনের ইতি টেনে যার যার বাসস্থানে ফিরে আসি।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি আবার লিখবো নতুন কোন ভ্রমনের নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে।
আশিকুর রহমান