Dream

IMG_20210825_233601

Dream – স্বপ্ন

“হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল; একটা স্বপ্নে”।

আমি সুভ্রনিল (গল্পসূত্রে ছদ্মনাম)। জন্মসূত্রে আমি শহুরে একটি ছোট্ট এলাকায়। বাবা বংশগতভাবে চলমান মুদির ব্যবসায় লিপ্ত। আমি পরিবারের ছোট সন্তান। আমরা ৫ভাই-বোন আর বাবা-মা। বলা যায়, একান্নবর্তী পরিবার আমাদের। আমি তখন ৩র্থ নতুবা ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ছিলাম।

৮০ দশকের শেষে বা ৯০ দশকের শুরুতে, এমন সময়ের মধ্যে। বাবা আমার বড় ভাইয়াকে বাইক কিনে দেয়। তখন এখনের মত বুঝতাম না এতকিছু। শুধু জানতাম একটা চাবি ছিল, ওটা ঘুরিয়ে নিচের অংশের হেন্ডেলে পা দিয়ে চাপ দিলেই সুন্দর একটা শব্দ হয়ে গাড়ি চালু হয়। বড় ভাইয়াকে দেখতাম এমনটায় করত সবসময়ই। আমি মাঝে সাঝে চুরি করে এমনটা করতে গিয়ে নিজের পায়ে ব্যাথা পেয়ে চাবি আবার যথাস্থানে রেখে দিতাম, যেখান হতে চাবি খানা নিতাম। এইভাবে চলতে চলতে হাই স্কুল উঠলাম। কিন্তু ওই যে বাইক, ওটার প্রতি আকৃষ্টতা বিন্দুমাত্র কমতি ছিল না। বরং আরো বেশি ছিল। এখন আমি প্রায় একটু একটু চালাতে পারি। বাবা-ভাই থেকে লুকিয়ে চালায়।

আস্তে আস্তে বুঝতে শিখি, জানতে শিখি, অতঃপর আমি বাইকের প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়ি। বাবা’কে একদিন বায়না করে বলে দিলাম- “বাবা, আমাকে একটা মোটর সাইকেল নিয়ে দাও”। বাবা বলল- আর একটু বড় হও তারপর নিয়ে দিব। কিন্তু আমার মন মানতে নারাজ। অনেক জিদ্দি ছিলাম। এদিক-ওদিক করে টাকা জমাতাম আর ভাইয়াকে বলতাম- আমাকে বাইক চালানো শিখাতে। ভাইয়াও টাকা নিয়ে একটু আদটু চালাতে দিয়ে বলত। হয়েছে, শেষ। আমি টাকা জমাতাম আর ভাইয়াকে দিয়ে বাইক চালাতাম। এইভাবে চলতে চলতে আমি স্কুল শেষ করে স্কুলে উঠলাম। ৯০ দশকের মাঝা-মাঝিতে দাদা পূর্বের গাড়িটা বিক্রি করে দিল। নতুন একটা মোটরসাইকেল কিনল। লাল রং এর একটা মোটরসাইকেল। খুব সুন্দর দেখতে। চলানোর সময় শব্দ হতো ওটাও খুব সুন্দর। আমার ভীষণ পছন্দ ছিল। বড় ভাইয়াকে যখন চালাতে দিতে বললাম। ভাইয়া আমাকে ধমক দিল। ওটা নতুব বাইক৷ এটা চালাতে দেওয়া যাবেনা। তখন মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। বাবা’কে ওইদিন আবার বলতে গিয়ে দেখি- বাবা, মায়ের সাথে কর্জের টাকা নিয়ে আলাপ করছে! সেদিন কেমন জানি নিজের মধ্যে একটা কষ্ট অনুভব হলো বাবা-মায়ের চেহারায় কষ্ট আর নিরাশা দেখে! নিজের ইচ্ছেকে চেপে রেখে ফিরে গিয়ে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলাম। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম। পড়াশোনা শেষ করে একটা ভালো চাকরি করে বাবা-মায়ের জন্য কিছু করে তারপর স্বপ্ন পূরণ করব। তারপর মন দিয়ে পড়াশোনা করে কলেজ শেষ করলাম ভালো রেজাল্ট করে; ইউনিভার্সিটি ভর্তি হলাম। পাশাপাশি একটা প্রাইভেট ফার্মে পার্ট টাইম চাকরিও পেলাম। আস্তে আস্তে বাবা-মায়ের পাশে ছায়া হয়ে থাকতে শুরু করলাম। এইভাবে দিন চলতে লাগল। পরিশ্রম করছি, বাবা-মা-পরিবার সবাইকে নিয়ে মোটামুটি আনন্দে ছিলাম। আর নিজের স্বপ্নকে রোজ দেখতাম। তবে নিজের মধ্যে। একদিন-  “হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল; একটা স্বপ্নে”। স্বপ্নটা ছিল এমন যে- বাবা আমাকে বাইক দিয়ে সারপ্রাইজ করেছিল আমার জন্মদিনের উপহার হিসেবে। জেগে দেখি, আমি অন্ধকার রুমে। সময় দেখি ভোরের নাগাদ। ব্যাপারটা নরমালি নিয়ে, নিজের স্বপ্নকে নিজের মধ্যে বাঁচিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপাতে সব ভালোই চলছিল।

তারপর এলো প্রথম বাইক কিনার দিন। আমি বাবা-মা উভয়কে সামনে বসিয়ে বলতে লাগলাম- ” বাবা-মা আমি একটা নিজের জন্য বাইক নিতে চাই” তোমরা কি বল? তখন মা চুপ থাকলেও বাবা সম্মতি দিয়ে বলে- “নিয়ে নে বাবা”। তখন আমি কতটা আনন্দিত হয়েছি বলার বাহিরে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়েছিলাম সেদিন। তারপর বাবা-মা দু’জন’কে নিয়ে নতুন বাইক কেনার জন্য গেলাম শো-রুমে। গিয়ে এত এত মূল্যের বাইক ছিল যে, নিজের পকেটে’র চিন্তা করলে কিছুই নাই নিজের জন্য। বাবা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিল তখন। বলে- বাবা’ রে ক্যামনি নিবি তোর স্বপ্নের বাইক! যা দাম, আমাদের হাতের নাগালের বাহিরে। এসব স্বপ্ন আমাদের জন্য আসেনি! তারপরও দেখতে দেখতে একটা পেলাম নিজের কম বাজেটের। মহান সৃষ্টিকর্তার নামে নিয়ে নিলাম সেই বাইকটি। জীবনের প্রথম বাইক কিনা। তাই অনুভূতি ছিল অস্থির। প্রথম বেশ অনেক মাস তো আমি বাইক’টা আমার রুমে পার্কিং করে রেখেছিলাম। সবসময় পরিষ্কার করতাম। রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে গাড়ি পরিষ্কার করে আর শুয়ে পড়তাম। এইভাবেই চলতে লাগল আমার বাইকারের জীবনের যাত্রা। তারপর বাবা-মা উভয়কে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পিছনে বসিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করি বা কাজ কর্মে গন্তব্যে পৌছায়। সেই থেকে আজ অব্দি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপাতে বাইক এর স্বপ্ন পূরনের পর হতে  বাবা-মা’কে আরো আপন করে পেলাম। বহুবার বাইক পরিবর্তন করেছি সময়ের সাথে নিজের আয়ত্তে। বাইক আমাকে তেমন নিরাশ করে নি তবে, আমার মনের শান্তিতে অফুরন্ত ভূমিকা রাখছে…

তবে হ্যা- “স্বপ্ন পূরণ; স্বপ্ন দেখার মত সহজ কখনোই না”। স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেকটা কষ্ট সহ্য করতে হয়! অনেকটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়! অনেক গালমন্দও শুনতে হয়! তবে স্বপ্নকে মনে ধরে চেষ্টা করলে স্বপ্ন নিজেই পূর্ণতা লাভ করে।

✍️গল্পকথক- ইমন বিশ্বাস।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Categories
Become a member

Join Our Family

250+ members and the family keeps growing!

Let’s Ride Together

Our Discount

Partners

BDBIKERZ members will get exclusive discount on our partners shop & enjoy more.

BDBIKERZ members will get exclusive discount on our partners shop & enjoy more.   BDBIKERZ members will get exclusive discount on our partners shop & enjoy more.