Solo International Bike Ride -BDBIKERZ
🇧🇩 🏍️ 🇮🇳
আমি পলাশ কুমার শীল। জন্মসূত্রে চট্টগ্রাম এর একজন স্থায়ী বাসিন্দা। বাইক আমার পছন্দের সর্ব প্রথম স্থানে। সেই সুবাদে মোটামুটি ১.৫ যুগের বেশি সময় ধরে বাইক রাইড করছি। বলতে গেলে ঈশ্বরের কৃপাতে সুস্থভাবে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ সম্পূর্ণ করেছি। কিছু কিছু জেলা তো বেশ কয়েকবার করেও ভ্রমণ করেছি। ভ্রমণে কি পরিমাণ মানসিক শান্তিতে আমি আপ্লূত হই; তা বলে বোঝানো যাবে না। যারা আমার মত বাইক এবং ভ্রমণে আসক্ত তারা’ই কেবল তা সহজে অনুভব করতে পারবেন। তবে এটা না বললে নয়, আমি পাহাড়ের প্রেমে অধিকন্তু পড়ে থাকি। পাহাড় আমাকে সবসময় টানে৷ সময় হলেই আমি Solo Ride এ বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, সাজেক এর মত পাহাড়ে রাইড করে থাকি বেশি সময়। বাইক আর ভ্রমণ এক প্রকার আমার মানসিক শান্তি। 🫶

সাম্প্রতিক মনে কেমন যেন দেশের বাহিরে রাইড করার ইচ্ছে হচ্ছিল প্রতিদিন। খুব ক্লোজ এবং রাইড পার্টনার অনেক জনকে অবগত করলেও তারা অধিকন্তু সাহস নিয়ে আমার সাথে সম্মতিতে অনিচ্ছুক! তাদের অনেকে যাবে তো না, উল্টো আমার সাহসিকতাকে নিয়ে উপহাস করছে! তাদের মন্তব্য- “এটা বলার মত সহজ না; আর বাইক নিয়ে নতুন দেশে রাইড এতটা সহজও না”! মোট কথা নানা রকমভাবে উপহাসের পাত্র হয়েছিলাম। মন ভেঙ্গে গেল!
নিজেকে স্থির করলাম। যা হবার হবে। দেশে Solo Ride এর অভ্যাস যেহেতু বিধ্যমান তখন এটাও….💪
যেই চিন্তা সে’ই কাজ শুরু।🙈
জানুয়ারির ৭ তারিখে আমার মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট এর রেন্যুর আবেদন করলাম। পাসপোর্ট নতুন ভাবে আসার পর ইন্ডিয়ান ভিসা’ প্রসেসিং করলাম। ভিসা আসার পর ইন্টারন্যাশনাল ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য প্রসেসিং শুরু করলাম। সেটাও সুস্থভাবে হাতে পাওয়ার পর ট্র্যাভেল ট্যাক্স, কাস্টম ভ্যাট দিয়ে দিলাম। তবে নিজের বাইক নিয়ে ভ্রমণ করার মত ইচ্ছে থাকলেও বাইক কারনেট করার প্রসেসিং এবং খরচাআনুপাতিকসারে আপাতত আমার অবস্থার সাথে সম্ভব হচ্ছিল না! বাকি সব’টা প্রসেসিং শেষ করে এবার যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এই অনুভূতি কাউকে বলে বুঝানোর মত ছিল না! অনেক অনেক বেশি এক্সাইটেড হয়ে পড়েছিলাম।🫣

তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম ঈদের ছুটিতেই আমার ইচ্ছে পূরণ করব। ঈদের বন্ধ ঘোষণা হলো অফিসে আর আমার মনের উদ্ধিগ্নতা বাড়তে থাকে৷ অবশেষে ছুটির দিন শুরু, আর আমার যাত্রা ও অবশেষে শুরু।☺️🏍️
নিজের বাইক নিয়ে চট্টগ্রাম হতে ঢাকা হয়ে যশোর পৌছাঁলাম। সেখানে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাড়িতে বাইক রেখে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তার বাড়ি বেনাপোল এর পাশেই অবস্থিত ছিল, তাই বর্ডার যেতে তেমন অসুবিধা হয়নি। বন্ধুর বাড়িতে বাইক রেখে বর্ডার এ প্রবেশ করলাম। সব প্রসেসিং শেষ করে ইন্ডিয়া বর্ডারে অবশেষে একাই প্রবেশ।
বর্ডার হতে কোলকাতা পৌঁছে এক বন্ধুর বাড়িতে উঠলাম। বন্ধুর সাথে আসার আগেই কথা হয়েছিল তার বাড়িতে উঠব। তাকে আমার সাথে জয়েন হওয়ার অনুরোধ করলেও তখন তার বন্ধ না থাকায় তাকে অনেক মিস করলাম। কারণ আমাদের দেশে তখন ঈদের আমাজের বন্ধ থাকলেও তাদের দেশে তেমন ওই বন্ধ পরিলক্ষিত হয় নি। তাই বন্ধুকে সাথে নেওয়াও সম্ভব হয়নি! তারপর আড্ডা দিয়ে বেশ অনেক সময় রেস্ট করে তার সাথে গিয়ে বাইক রেন্ট নিলাম। যা প্রতিদিন হারে ১৫০০রুপি। বাইক ছিল- হিমালয়া ৪১১। পরেরদিন সকালে নতুন দেশে আমার রাইড শুরু।
কলকাতা হতে হাওড়া-মুদিনগর-পথানজলি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে দিল্লি পৌছালাম। সেখানে রাত্রি অবস্থান করে পরেরদিন সকালে আবার দিল্লি হতে হরিদ্বার-ঝৃষিক্যাশ পৌছালাম। ঠিক যেন স্বর্গ রাজ্যে এলাম আমি। ঠান্ডা হাওয়া, মেঘে ডাকা রাস্তা, অনেক বড় বড় উচু বরফে ডাকা হিমালয় শৃঙ্গ। এতটায় সুন্দর লাগছিল বলার বাহিরে। কাছ হতে আরো কাছে যত যাচ্ছিলাম মুগ্ধতার সর্বোচ্চতায় আমি ছিলাম তখন৷ যেতে যেতে হিমালায় শৃঙ্গের এতটায় কাছে পৌছে গিয়েছলাম যে, আমার শরীরে থাকা রাইডিং জ্যাকেট, সুয়েটার, টুপি, গ্লাবস এসবেও ঠান্ডা মানছিল না। -1° তাপমাত্রায় ঠান্ডা পরছিল রাতের প্রথম দিকে। ভোর হতে সকাল সূর্য উদয় অব্দি তো -3° তাপমাত্রায় অবস্থান নিয়ে নিল ঠান্ডা। শিতে কাঁপা-কাঁপির মধ্যেও হিমালয়ের মেঘ এতটায় কাছে ছিল যে, তখন ঠান্ডাও মনের আনন্দের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিল। এইভাবে ৪টা দিন কাটিয়ে দিলাম হিমালয় শৃঙ্গের সন্নিকটে।
এবার বাড়ি ফিরা। আবার একই রুট ধরে ফিরেতে লাগলাম। কলকাতায় পৌঁছে বাইক ফেরত দিলাম। বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে বন্ধুর সাথে আমার Solo Ride এর গল্প বলতে বলতে সকাল করে ফেললাম। তারপর দুজনে ঘুমিয়ে গেলাম। বিকাল গড়িয়ে নামার আগেই বের হয়ে গেলাম। বর্ডার ক্রস করে আবার বেনাপোল অবস্থিত বন্ধু বাড়ি গিয়ে নিজের বাইক নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা। আবার দীর্ঘ সময় রাইড করার পর নিজের বাড়িতে অবস্থানে সম্পন্ন হলাম।❤️
-যেটা না বললে নয়, নিজের মন’কে সবসময়ই একটু বেশিই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কারণ আমাদের জীবনে খারাপ সময়গুলোতে বা মন খারাপের সময়গুলো আমাদের বন্ধু বলতে কেবল আমরা নিজেদের জন্য নিজেরাই অবশিষ্ট থাকি। আপনার কঠিনতম সিদ্ধান্তে সবাই আপনাকে নিয়ে উপহাস করলেও আপনার জন্য আপনি সেরা একজন শক্তিশালী যোদ্ধা এবং বন্ধু।
📖🖊️ Imon Biswas (IB’94)