Self Satisfaction

IMG_20210825_233601

Self Satisfaction – BDBIKERZ

আমি পলাশ রায় (গল্পসূত্রে ছদ্মনাম)। শৈশব হতে আমি বাইকের প্রতি অন্যরকম আসক্ত। বলতে পারেন বাইক’ই জীবন। তবে এই জীবনে যে নারীও আসতে পারে এটা কল্পনা ছিলনা। আসলে নারী আর গাড়ি একসাথে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

“তন্নী” আজকের গল্পের নায়িকার নাম। ঢাকায় বসবাস করলেও তার জন্মস্থান ছিল কিশোরগঞ্জের একটা ছোট গ্রামে। পরিবারের সবার বড় মেয়ে তন্নী। তবে একটা মজার ব্যাপার হলো- তন্নীও একজন লেডি বাইকার। সে স্পোর্টস বাইক চালায়। তাও আবার আপডেট বাইক। Yamaha R15M। তবে তার রাইডিং স্কিল খুব সুন্দর।

তাহলে গল্পে আসা যাক। আমি তখন সবে মাত্র মাস্টার্স শেষ করলাম। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলাম। বেশ ভালোই ছিল পরিবেশ। চট্টগ্রাম ছিল আমাদের শাখা অফিস। আমি ওই কোম্পানীতে ফ্যাক্টরী ম্যানেজার হিসেবে জয়েন করেছিলাম। তাই অফিসের কাজে প্রায়শই ঢাকা যাওয়া হতো মেইন অফিসে। সেই ঢাকা হেড অফিসে’ই তন্নী চাকরী করতো। এই ঢাকা-চট্রগ্রাম আসা-যাওয়াতেই তন্নী’কে পাওয়া। সে অনেক সুন্দর ছিল। আমি মূলত প্রথমে তার বাইকের প্রেমে পড়েছিলাম এবং পড়ে তার।

প্রতিবারের মত আমি ঢাকায় গিয়ে অফিসে উঠলাম। অফিসের কাজ শেষ করে পার্কিং এ নিজের গাড়ি বের করতে গিয়ে দেখি, আমার বাইকের পিছনে একটা Yamaha R15M পার্ক করা। হেন্ডেল লক এবং ডিস্ক লক থাকায় গাড়িটা সরানো মুসকিল ছিল আমার পক্ষে! আমি রাগান্বিত হয়ে চেষ্টা করছিলাম কোন উপায় বের করার। কারণ আমাকে চট্টগ্রামে ব্যাক করতে হবে। আমার এমন অস্থিরতা সিকিউরিটি হয়তো খেয়াল করেছিলেন। উনি দৌড়ে এসে বলল- স্যার কোন সমস্যা? তখন আমি প্রতিউত্তরে বললাম- দেখুননা গাড়িটা এমনভাবে রাখল; আরেকটা বের করার জায়গাটাও রাখে নাই! তার মধ্যে আবার অনেকগুলো লক! একদিকে দেড়িও হচ্ছে বাড়ি ফিরার। তিনি আমার কথা শুনে বললেন- স্যার এটা তো তন্নী মেডামের বাইক। আপনি একটু অপেক্ষা করুন। আমি উনাকে ডেকে নিয়ে আসছি। তারপরই জানতে পারলাম একজন লেডী বাইকার এর বাইক এটি। তার একটুপর একটা সুন্দর মেয়ে আসল। আর সরি সরি বলতে বলতে লকগুলো আনলক করে গাড়িটা সড়িয়ে নিল। আমিও কোন কথা বলতে পারি নাই তখন। তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম কেবল! সে এতটায় সুন্দর ছিল যে বলার বাহিরে। আর বাইকএ উটার পর তাকে যে কতটা মারাত্মক সুন্দর লাগছে তা বুঝানো সম্ভব না। তখন আরো মায়াতে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। সেই হতে শুরু। এরপর পরবর্তীবার ঢাকা অফিসে গিয়ে আগে তাকে খুঁজি আর পরিচিত হই। তারপর প্রতিদিন কথোপকথন হয় আর এইভাবে সম্পর্ক গভীর হয় আমাদের। 

কথা বলতে বলতে বুঝলাম- তন্নীও আমার মত বাইক পাগল। পিতা হতে শিখছেন। স্কুল জীবন থেকেই বাইক নিয়ে চলাফেরা তার। তার সাথে এইভাবে মিশতে মিশতে একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল আমাদের।  তন্নী আর আমি রাইড করে ঢাকা হতে চট্টগ্রাম আসতাম এবং সে অফিসের কাজ শেষে আমার বাড়িতেই উঠতো। প্রথম পরিচয়েই তন্নী আমার মা’কে বেশ আপন করে নেওয়াতে ব্যাপারটা নরমালি হয়ে গিয়েছিল তার আসা-যাওয়াটা। আমার মা’কে যখন প্রথমবার তন্নীকে পরিচয় করিয়ে দিই তখন মা একটু হিমশিম হয়ে পড়ে। কিন্তু তন্নী এতটায় মিশুক যে মা প্রায় তারসাথে কথা বলতে চাইত, যখন সে ঢাকা থাকতো। বলতো প্রতি সপ্তাহে বাসায় চলে আসতে। এইভাবে আসা-যাওয়া, বিভিন্ন স্থানে ট্যুর করা ইত্যাদি আমার অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছিল৷ তারপর পরিবারের মতামতে আমাদের বিবাহের কথাবার্তা হয় এবং এক পর্যায়ে আমরা বিবাহে আবদ্ধ হয়ে পড়ি।

আমাদের বিয়েতে বিশাল একটা বাইক র‍্যালি হয়েছিল বিয়ে করতে যাওয়ার সময়। সেটা সম্ভব হয়েছিল আমার বন্ধুদের দ্বারা। আসলে এটা তন্নীর স্বপ্ন ছিল শুধু তা নয়; আমারও ছিল বলে হয়েছিল এতটা সুন্দর করে। প্রায় শতাধিক বাইক। যেখানে লেডি বাইকার আর আমার সব বন্ধুরাও ছিল। অসম্ভব সুন্দর ছিল সময়টা। আমাদের স্বপ্নটা বেশ সুন্দর হয়ে পূরণ হয়েছিল।

বিয়ের পর আমাদের বাইকা’র জীবন ছিল আরো সুন্দর। প্রায় প্রতিটা সপ্তাহ আমাদের লিস্টে ভ্রমণ থাকত। আমরা একদিক-সেদিক চলে যেতাম। বেশ অনেকবার আমরা বিভিন্ন জেলা ভ্রমণে চলে গিয়েছিলাম। সাজেক, বান্দরবান এসবে প্রায় প্রতিমাসেই ট্যুর থাকত আমাদের। 

আজ আমাদের বিয়ের ৫ম বিবাহবার্ষিকী। আমরা আজকেও ট্যুরএ আছি। চট্টগ্রাম দক্ষিণের অন্যতম সুন্দর স্থান সেন্টমার্টিন এ। আমরা উভয়ের ইচ্ছে আমরা আমাদের প্রতিটি বার্ষিকী একটা সুন্দর স্থানে কাটাব। আর তাই প্রতি বছর এই সময় এক একটি স্থানে ভ্রমণে থাকি।

-তবে হ্যা, মন স্থির করে সুন্দর মনে কিছু চাওয়া হলে; মহান সৃষ্টিকর্তা কাউকে নিরাশ করেন না। হয়ত একটু আগে বা পরে, কিন্তু মনের অপূর্ণ চাওয়াটা পূর্ণ হবেই।

✍️গল্পকথক- ইমন বিশ্বাস।

Leave a Reply

Categories