নতুন মোটরসাইকেল কেনার পূর্বে তার কন্ডিশনের জন্য অনেক বিষয়ে খেয়াল রাখতে না হলেও, পুরাতনের ক্ষেত্রে তা জরুরি। দেখে নিন ব্যবহৃত মোটরবাইক কেনার সময় কী কী বিষয় জেনে রাখতে হবেঃ
১. বাইকের লুক :
একটি পরিছন্ন মোটরসাইকেল সবসময়ই গ্রাহকের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম। একেবারে শুরু থেকেই বিক্রেতার সাথে খোলামেলা ভাবে বাইকের ব্যাপারে আলোচনা করুন। চেষ্টা করুন মোটরসাইকেলটির খুঁটিনাটি লক্ষ্য করতে। অনেকেই আছেন যারা শুধুমাত্র বিক্রি হওয়ার উদ্দেশ্যে বাইকটি সেই মুহূর্তের জন্য পরিছন্ন রাখেন, তবে অনেকেই আছেন যারা সত্যিই যত্ন সহকারে বাইকের দেখাশোনা করেছেন এবং সেটি বাইক দেখা মাত্রই আপনি বুঝতে পারবেন।
মোটরসাইকেলের ভেতরের অংশগুলো দেখার চেষ্টা করুন, যেই জায়গাগুলোতে সহজেই ময়লা পৌঁছাতে পারে এমন জায়গাগুলো বাইক লাভাররা সবসময় পরিষ্কার রাখেন।
২. ইঞ্জিনের শব্দ :
এবার বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ দিয়ে শুরু করা যাক। সবাই চায় তার পছন্দের বাইকের ইঞ্জিনের শব্দ শুনতে। যেহেতু ওয়ার্ম বা চালু থাকা অবস্থায় ইঞ্জিনের আওয়াজ অনেকাংশেই ঠিকঠাক শোনা যায় তাই আপনি আপনার বিক্রেতাকে অনুরোধ করতে পারেন যে আপনি উপস্থিত হওয়ার পরেই যাতে বাইক চালু করা হয়।
তবে মাঝে মাঝে সাইলেন্সার পাইপের সমস্যার কারণে ইঞ্জিনের শব্দ ভাইব্রেট বা কাঁপছে বলে আপনার মনে হতে পারে।
৩. ফ্রেম :
ইঞ্জিনের শব্দ ঠিকঠাক থাকলে এবার বাইকের ফ্রেমের দিকে তাকানো যেতে পারে। ভালোভাবে লক্ষ্য করুন সেখানে কোনো দাগ, স্পট, অথবা সেটি বেঁকে গেছে কিনা। যদি আপনার কোনো কারণে মনে হয় বাইকটি এর আগে দূর্ঘটনার শিকার হয়েছিল, তাহলে শুরুতেই বিক্রেতার কাছে বিস্তারিত জেনে নিন। সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে অনেকেই এই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন।
৪. ক্লাচ :
ক্লাচ আপনার মন মতো না হলে সেটি ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে। তবে দেখার জন্য শুরুতেই ক্লাচ টি চেপে ধরে ছাড়ুন, স্মুথ মনে হচ্ছে? টানা এবং ছেড়ে দেওয়া দুই অবস্থাতেই ক্লাচটি মসৃণ ভাবে কাজ করার কথা। এবার বাইকটি চালু করে গিয়ার দিন, ক্লাচটি হালকা করে ছাড়লেই বাইকটি আগাতে থাকবে।
৫. ব্রেকিং সিস্টেম :
ক্লাচ চেক করার পরে বাইকটি নিয়ে চালিয়ে দেখুন। কিছুটা গতিতে থাকা অবস্থায় সামনের ব্রেকে চাপ দিন। কোনো ধরণের আওয়াজ ছাড়াই বাইকটি সেই জায়গাতেই স্থির হয়ে যাবে। এবার আস্তে আস্তে ব্রেক ছেড়ে ক্লাচে হাত দিয়ে পিকআপ বাড়ালেই বাইকটি এগোতে থাকবে পুনরায়।
এই পুরো প্রক্রিয়ায় আপনার কোথাও সমস্যা বোধ হলে অতিসত্বর বিক্রেতার সাথে কথা বলে তা ঠিক করানোর বা আপনি যেমন চাইছেন তেমন করানোর ব্যবস্থা করুন। ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনার ক্ষেত্রে ব্রেকিং সিস্টেম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ, তাই আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী সব ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিতে ভুলবেন না।
৬. সাসপেনশন :
মোটরবাইকের সাসপেনশন চেক করার জন্য ব্রেকের সাহায্য নিতে হবে। বাইকের সাসপেনশন ফোর্কগুলো ব্রেক কষার পর পুনরায় খুব স্মুথ ভাবে কোনো আওয়াজ ছাড়াই যথাস্থানে ফিরে আসবে। এবার ফোর্ক রিংগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। সেগুলো পরিষ্কার, চকচকে এবং মসৃণ ভাবে আছে তো?
এবার পেছনের সাসপেনশন শকগুলো দেখে নেওয়ার জন্য বাইকের সিটে বসে নিচের দিকে চাপ দিতে হবে, এতে করে সেটি নিচের দিকে নেমে কোনো রকম কাঁপা ছাড়াই পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
৭. টায়ার :
মোটরসাইকেলের টায়ারের লেয়ার লক্ষ্য করুন। চাকার মাঝামাঝি যদি কিছু ফেটে যাওয়ার মত দাগ থাকে এবং পাশগুলো ক্ষয়ে যায় তাহলে ধরে নিতে হবে মোটরসাইকেলটি এই চাকা ব্যবহার করে অনেক দিন চালানো হয়েছে। যা বাইকের ইঞ্জিনের জন্য ক্ষতিকরও বটে। এছাড়াও হার্ড ব্রেক এবং স্কিড করার কারণেও চাকায় এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও রিং-এ ডেন্ট আছে কিনা বা রিং বেঁকে গেছে কিনা খেয়াল করুন। এরজন্য বাইকটিকে মাঝের স্ট্যান্ডের সাহায্যে দাঁড় করিয়ে চালু করে দুই চাকা ঘুরিয়ে ভালো করে দেখে নিন।
৮. ট্যাংক :
তেলের ক্যাপটি খুলে ভিতরে লক্ষ্য করুন। তেলের রং দেখার চেষ্টা করুন এবং ভেতরের ট্যাংকের ভেতরের মেটাল বডি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কিনা তাও দেখুন। এই কাজটি করার জন্য আপনি টর্চ ব্যবহার করতে পারেন। যদি ভেতরে অন্ধকার হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে বাইকের তেল বদলানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে আপনি যদি সেই বাইকটি নেওয়ার মনস্থির করে থাকেন সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ইঞ্জিনটি ফ্ল্যাশ করে নিয়ে ব্যবহার করা ভালো।
৯. কোল্ড স্টার্ট :
এবার বাইকটি কোল্ড রান করে দেখুন। প্রতিটি বাইক কোম্পানির কোল্ড স্টার্ট পদ্ধতি আলাদা। এজন্য তেলের চকটি রিসার্ভ পজিশনে দিন। এবার বাইকের বিক্রেতাকে জিজ্ঞেস করে নিন সে সাধারণত কেমন এক্সেলেটর ব্যবহার করে বাইক চালু করার জন্য। যদি মোটরসাইকেলে ইলেকট্রিক সুইচ থাকে, তাহলে তার সাহায্যে বাইকটি অন্য করে পিকআপ ছেড়ে দিন।
বাইকের ইঞ্জিন ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হতে থাকলে ইঞ্জিনের আওয়াজটি লক্ষ্য করুন। এবার বাইকের পেছনে তাকান এবং দেখার চেষ্টা করুন বাইকটি কেমন ধোঁয়া নির্গমন করছে। যদি ধোঁয়া বেশি মনে হয় সেক্ষেত্রে বাইকের তেলের সমস্যা হতে পারে। তবে ঘন ধোঁয়া বা গন্ধ পরবর্তীতে সারিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
১০. সঙ্গে নিন দক্ষ কাউকে :
কেনার আগে বাইকের খুঁটিনাটি লক্ষ্য করতে থাকুন। আপনি যদি কোনো মার্কেটপ্লেস থেকে বাইকটি কিনে থাকেন, এবং আপনাকে সেই জায়গায় যেয়ে বাইকটি দেখতে হয়, সেক্ষেত্রে আপনি কোথায় যাচ্ছেন এবং কাদের সাথে ডিল করছেন সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। যদি মনে হয় আপনি কোনো ভাবে প্রতারণার শিকার হতে যাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে পুলিশি সহায়তা নিতে দ্বিধা করবেন না।
নিরুপায় না হলে একা একা গিয়ে পুরাতন বা সেকেন্ড হ্যান্ড মোটরসাইকেল না কেনাই ভালো। আপনার কোনো বাইকার বন্ধু বা পরিচিত মেকানিককে সাথে নিন। তাদের মাধ্যমে আপনি সঠিক দাম দিয়ে বাইকটি কিনছেন কিনা তাও দেখে নেওয়া যেতে পারে।
১১. কাগজপত্র :
পরিশেষে বাইকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এবং লাইসেন্স নাম্বার মিলিয়ে নিশ্চিত করুন এটিই সেই বাইক কিনা যার সেকেন্ড হ্যান্ড বাইক বিক্রি বিজ্ঞাপন আপনি দেখেছেন। সমস্ত নাম্বার মিলিয়ে নিন এবং লাইসেন্সের মেয়াদ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
বাইকটি রেজিস্ট্রেশন করা না থাকলে কিংবা অন্য কোনো শহরে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলে মালিকানা পরিবর্তনের পর কীভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তার ব্যাপারে আগেই জেনে রাখতে হবে।
Share this:
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Click to share on Pinterest (Opens in new window)
- Click to share on Tumblr (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to share on Telegram (Opens in new window)